train1

রাজশাহী থেকে জয়পুরহাট ট্রেনের সময়সূচী

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী ও জয়পুরহাট জেলার মধ্যে যোগাযোগের অন্যতম নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হলো ট্রেন। এই রেলপথটি বহু বছর ধরে মানুষের যাতায়াত, ব্যবসা ও পর্যটনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, পদ্মা নদী আর ঐতিহ্যবাহী আম-রাজধানী থেকে জয়পুরহাটের শিল্পাঞ্চল ও ঐতিহাসিক স্থানে প্রতিদিন শত শত মানুষ ট্রেনে ভ্রমণ করে থাকে। এই রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলো সময়মতো ছাড়ে, ভাড়াও তুলনামূলকভাবে কম, যা সাধারণ মানুষের জন্য সাশ্রয়ী। 

এছাড়া যারা শান্তিপূর্ণ ও আরামদায়ক ভ্রমণ পছন্দ করেন, তাদের জন্য ট্রেন একটি নিরাপদ ও আর্থিকভাবে সুবিধাজনক উপায়। শহরের ব্যস্ত সড়ক বা যানজটের ঝামেলা ছাড়াই নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়। রাজশাহী থেকে জয়পুরহাট ট্রেন রুটটি দেশের রেল নেটওয়ার্কে একটি জনপ্রিয় সংযোগ, যেখানে প্রতিদিন নির্দিষ্ট ট্রেন নির্ধারিত সময় অনুযায়ী চলাচল করে।


এই ব্লগে আমরা বিস্তারিতভাবে দেখবো—রাজশাহী থেকে জয়পুরহাট ট্রেনের সময়সূচী, টিকেটের দাম, ট্রেনের নাম, কাউন্টার যোগাযোগ নম্বর, এবং সহজে টিকেট কেনার উপায়। সব তথ্য সর্বশেষ তথ্যভিত্তিক ও যাত্রীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা অনুযায়ী সাজানো হয়েছে, যাতে আপনি নিজের যাত্রা পরিকল্পনা সহজে করতে পারেন।

রাজশাহী থেকে জয়পুরহাট ট্রেনের সময়সূচী

train2

রাজশাহী থেকে জয়পুরহাট রুটে প্রতিদিন বাংলাদেশ রেলওয়ের কয়েকটি ট্রেন চলাচল করে। যাত্রীরা সকাল, বিকেল এবং রাতে ভ্রমণের সুযোগ পান। নিচে ট্রেনের সময়সূচী, আনুমানিক ভাড়া, ও ট্রেনের ফ্রিকোয়েন্সি (চলাচলের হার) তুলে ধরা হলো।

ট্রেনের নামআনুমানিক ভাড়া (শোভন শ্রেণি)প্রথম ট্রিপশেষ ট্রিপফ্রিকোয়েন্সি
তিতুমীর এক্সপ্রেস (৭৩৩)১৩০সকাল ৬:২০প্রতিদিন
বরেন্দ্র এক্সপ্রেস (৭৩১)১৩০বিকেল ৩:০০প্রতিদিন
বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস (৮০৩)১৪০রাত ৯:০০সপ্তাহে ৬ দিন

এই সময়সূচী অনুযায়ী যাত্রীরা নিজেদের সুবিধামতো ট্রেন নির্বাচন করতে পারেন। সকালের ট্রেন অফিস বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্য উপযোগী, আবার রাতের ট্রেন ব্যবসায়িক বা দূরপাল্লার যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক বিকল্প। ভাড়া সামান্য পার্থক্য থাকতে পারে আসন শ্রেণি ও ট্রেন অনুযায়ী।

ট্রেনের নাম, কাউন্টার ও যোগাযোগ নম্বর সমূহ 

যাত্রার আগে টিকেট বা তথ্য জানার জন্য ট্রেন কাউন্টার বা রেলওয়ে অফিসে যোগাযোগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজশাহী রেলস্টেশনেই বেশ কয়েকটি কাউন্টার আছে যেখানে যাত্রীরা টিকেট সংগ্রহ বা তথ্য জানতে পারেন। নিচে ট্রেনভিত্তিক কাউন্টার তথ্য দেওয়া হলো—

ট্রেনের নামকাউন্টার নামযোগাযোগ নম্বর
তিতুমীর এক্সপ্রেসরাজশাহী রেলওয়ে কাউন্টার০১৭১১৬৯১৬১২
বরেন্দ্র এক্সপ্রেসরাজশাহী রেলওয়ে কাউন্টার০১৭১১৬৯১৬১২
বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেসরাজশাহী রেলওয়ে কাউন্টার০১৭১১৬৯১৬১২

(উল্লেখ্য, যোগাযোগ নম্বর পরিবর্তনশীল হতে পারে, তাই যাত্রার আগে বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেদেখে নেওয়া উত্তম।)

এই কাউন্টারগুলোতে আপনি টিকেটের দাম, সময়সূচী, এবং ট্রেনের আসন খালি আছে কি না — তা জানতে পারবেন।

ট্রেনের টিকেট কেনার পদ্ধতি?

train3

বাংলাদেশে এখন ট্রেন টিকেট কেনা আগের চেয়ে অনেক সহজ। রেলওয়ে এখন অনলাইন টিকেট ব্যবস্থা চালু করেছে, যার মাধ্যমে যাত্রীরা ঘরে বসেই টিকেট কিনতে পারেন। নিচে ধাপে ধাপে টিকেট কেনার পূর্ণ প্রক্রিয়া দেওয়া হলো —

অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন:

বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://eticket.railway.gov.bd এ যান।

অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন:

প্রথমবার ব্যবহার করলে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। নাম, মোবাইল নম্বর, ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করুন।

লগইন করে যাত্রার তথ্য দিন:

 উৎস স্টেশন (Rajshahi) এবং গন্তব্য (Joypurhat) নির্বাচন করুন। তারপর যাত্রার তারিখ দিন।

ট্রেন নির্বাচন করুন:

 প্রদর্শিত তালিকা থেকে উপযুক্ত ট্রেন নির্বাচন করুন (যেমন তিতুমীর এক্সপ্রেস, বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ইত্যাদি)।

আসন শ্রেণি নির্বাচন করুন:


শোভন, শোভন চেয়ার, প্রথম শ্রেণি, স্নিগ্ধা ইত্যাদি আসনের ধরন বেছে নিন।

ভাড়া যাচাই করুন:


আসন নির্বাচন করার পর টিকেটের মোট মূল্য দেখা যাবে। ভাড়া ট্রেন ও আসন শ্রেণি অনুযায়ী ভিন্ন হয়।

পেমেন্ট পদ্ধতি নির্বাচন করুন:

 বিকাশ, নগদ, রকেট, কার্ড (ভিসা/মাস্টারকার্ড) — যেকোনো মাধ্যম ব্যবহার করে পেমেন্ট সম্পন্ন করুন।

ই-টিকেট ডাউনলোড করুন:

পেমেন্ট সম্পন্ন হলে আপনার মোবাইল বা ইমেইলে একটি ই-টিকেট চলে আসবে। এটি প্রিন্ট করে রাখুন বা মোবাইলেই সংরক্ষণ করুন।

স্টেশনে রিপোর্ট করুন:

যাত্রার দিন ট্রেন ছাড়ার অন্তত ২০-৩০ মিনিট আগে স্টেশনে পৌঁছান। গেট ও কোচ নম্বর দেখে সঠিক আসনে বসুন।

স্টেশন কাউন্টার থেকে টিকেট কেনা (অফলাইন):

 আপনি চাইলে সরাসরি রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে কাউন্টার থেকেও টিকেট নিতে পারেন। অফিস সময় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

টিকেট ফেরত বা পরিবর্তন:

 নির্ধারিত সময়ের আগে চাইলে টিকেট ফেরত বা পরিবর্তন করা যায়। অনলাইন টিকেটের ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটেই এই বিকল্প পাওয়া যায়।

নিরাপত্তা ও সতর্কতা:


শুধুমাত্র অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা রেলওয়ে কাউন্টার ব্যবহার করুন।অচেনা লোক বা তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে টিকেট কিনবেন না।ভ্রমণের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট সঙ্গে রাখুন।

এই প্রক্রিয়া মেনে চললে রাজশাহী থেকে জয়পুরহাট পর্যন্ত ট্রেন টিকেট কেনা এবং ভ্রমণ করা হবে একদম ঝামেলামুক্ত ও সুষ্ঠু।

 রাজশাহী থেকে জয়পুরহাট ট্রেনে যেতে কত সময় লাগে?

সাধারণত এই রুটে ট্রেন ভেদে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় লাগে। যদি ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছাড়ে, তবে যাত্রা বেশ আরামদায়ক ও সময়সাশ্রয়ী হয়।

রাজশাহী থেকে জয়পুরহাট ট্রেনের টিকেট কিভাবে অনলাইনে কিনবো?

বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এ গিয়ে নিবন্ধন করে টিকেট কেনা যায়। বিকাশ, নগদ বা কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করে ই-টিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন।

উপসংহার

রাজশাহী থেকে জয়পুরহাট রেল রুটটি উত্তরাঞ্চলের অন্যতম জনপ্রিয় যোগাযোগ ব্যবস্থা। প্রতিদিন হাজারো যাত্রী এই রুটে চলাচল করেন ব্যবসা, শিক্ষা ও পারিবারিক প্রয়োজনে। সময়মতো ট্রেন ছাড়ে, ভাড়া সাশ্রয়ী, আর যাত্রা হয় আরামদায়ক।

যাত্রার আগে সময়সূচী দেখে সঠিক ট্রেন বেছে নিন, অনলাইনে টিকেট বুক করুন এবং স্টেশনে আগে পৌঁছান। এতে অপ্রয়োজনীয় দেরি বা ভোগান্তি থেকে মুক্ত থাকা যায়।

বাংলাদেশ রেলওয়ের অনলাইন টিকেট সিস্টেম যাত্রীদের জন্য অনেক সহজ করেছে যাত্রার প্রস্তুতি। তাই এখন আর লাইন ধরার ঝামেলা নেই — ঘরে বসেই টিকেট বুক করে নিতে পারেন।

সবশেষে, ভ্রমণের সময় নিরাপত্তা বজায় রাখুন, মূল্যবান জিনিসপত্র নিজের কাছে রাখুন, এবং ট্রেন যাত্রা উপভোগ করুন। রাজশাহী থেকে জয়পুরহাট ট্রেন রুট হতে পারে আপনার পরবর্তী সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতা।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *