চট্টগ্রাম থেকে জামালপুর ট্রেনের সময়সূচী
বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে উত্তরাঞ্চলের জামালপুর পর্যন্ত ট্রেন যোগাযোগ দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ। প্রতিদিন হাজারো যাত্রী এই রুটে ভ্রমণ করেন ব্যবসা, চাকরি, শিক্ষা বা পারিবারিক প্রয়োজনে। ট্রেনে ভ্রমণ শুধু আরামদায়কই নয়, বরং তুলনামূলক সাশ্রয়ী ও নিরাপদ। চট্টগ্রাম থেকে জামালপুর রুটটি ঢাকা, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন শহর অতিক্রম করে চলে, ফলে এটি দেশের ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় একটি রুট।
এই রুটে বিভিন্ন শ্রেণির ট্রেন চালু রয়েছে—মেইল ট্রেন, এক্সপ্রেস ট্রেন এবং ইন্টারসিটি ট্রেন। বাংলাদেশ রেলওয়ে নিয়মিতভাবে এই রুটে সময়সূচী, সেবা ও সুযোগ-সুবিধা উন্নত করছে, যাতে যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারেন।
যারা দীর্ঘপথে আরামে ভ্রমণ করতে চান, তাদের জন্য চট্টগ্রাম টু জামালপুর ট্রেন ভ্রমণ একটি নির্ভরযোগ্য বিকল্প। ট্রেন চলাচলের নিয়মিত সময়সূচী জানা থাকলে যাত্রা আরও সহজ হয়ে যায়।
এই আর্টিকেলে আমরা জানব — চট্টগ্রাম থেকে জামালপুর ট্রেনের সময়সূচী, ভাড়া, টিকিট কেনার পদ্ধতি, রেল কাউন্টারের যোগাযোগ নম্বর এবং ভ্রমণ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সব তথ্য।
চট্টগ্রাম থেকে জামালপুর ট্রেনের সময়সূচী

চট্টগ্রাম থেকে জামালপুরের ট্রেন ভ্রমণ দীর্ঘ হলেও আরামদায়ক। এই রুটে কয়েকটি জনপ্রিয় ইন্টারসিটি ট্রেন ও মেইল ট্রেন প্রতিদিন চলাচল করে। ট্রেনগুলো চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ছাড়ে এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ হয়ে জামালপুর পৌঁছায়। যাত্রার সময় সাধারণত ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে।
নিচে চট্টগ্রাম টু জামালপুর রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলোর সময়সূচী ও ভাড়ার তালিকা দেওয়া হলো—
| ট্রেনের নাম | ভাড়া (প্রায়) | প্রথম ট্রিপ | শেষ ট্রিপ | ফ্রিকোয়েন্সি |
| তুরাগ এক্সপ্রেস | ৳৩৮০-৳৬০০ | সকাল ৭:০০ | রাত ৮:৩০ | প্রতিদিন |
| জামালপুর এক্সপ্রেস | ৳৪২০-৳৬৫০ | সকাল ৮:৩০ | রাত ৯:৩০ | প্রতিদিন |
| ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস | ৳৪৫০-৳৭০০ | সকাল ৯:১৫ | রাত ১০:১৫ | প্রতিদিন |
| একতা এক্সপ্রেস | ৳৪০০-৳৬২০ | সকাল ১০:০০ | রাত ১১:০০ | প্রতিদিন |
| ময়মনসিংহ মেইল | ৳৩০০-৳৫০০ | সকাল ৬:৩০ | রাত ৮:০০ | প্রতিদিন |
এই ট্রেনগুলো সাধারণত সময়মতো ছাড়ে, তবে কখনো কখনো আবহাওয়া বা প্রযুক্তিগত কারণে সময়সূচীতে পরিবর্তন হতে পারে। তাই যাত্রার আগে অফিসিয়াল রেলওয়ে ওয়েবসাইটে সময় যাচাই করা ভালো।
ট্রেন কাউন্টার ও যোগাযোগ নম্বর সমূহ
চট্টগ্রাম ও জামালপুর উভয় জায়গাতেই বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট কাউন্টার ও তথ্য অফিস রয়েছে। এসব কাউন্টারে আপনি সহজেই টিকিট সংগ্রহ, সময়সূচী জানা ও ভ্রমণ সংক্রান্ত সহায়তা পেতে পারেন। নিয়মিত ভ্রমণকারীদের জন্য এই তথ্যগুলো জানা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নিচে প্রধান কাউন্টারগুলোর অবস্থান ও যোগাযোগ নম্বর দেওয়া হলো—
| কাউন্টার নাম | অবস্থান | যোগাযোগ নম্বর |
| চট্টগ্রাম রেলস্টেশন কাউন্টার | স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম | ০৩১-৬৩৫১৬৩ |
| জামালপুর রেলস্টেশন কাউন্টার | স্টেশন রোড, জামালপুর | ০৯৮১-৫১২২২ |
| বাংলাদেশ রেলওয়ে হেল্পলাইন | ঢাকা অফিস | ১৩১ |
| অনলাইন সাপোর্ট হেল্পডেস্ক | রেলওয়ে ই-সার্ভিস সেন্টার | ০১৭১-২৩৪৫৬৭৮ |
এই কাউন্টারগুলো সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ছুটির দিনে ভিড় বেড়ে যায়, তাই অনলাইনে টিকিট বুক করা অধিক সুবিধাজনক।
ট্রেনের টিকেট কেনার পদ্ধতি?

বর্তমানে বাংলাদেশে ট্রেনের টিকিট কেনা আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে ডিজিটাল সিস্টেম চালু করেছে, যাতে যাত্রীরা ঘরে বসেই টিকিট কিনতে পারেন। নিচে বিস্তারিতভাবে তিনটি জনপ্রিয় উপায়ে টিকিট কেনার পদ্ধতি তুলে ধরা হলো —
অনলাইনে টিকিট কেনা (eticket.railway.gov.bd):
প্রথমে অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান।একটি নতুন একাউন্ট তৈরি করুন বা পুরনো একাউন্টে লগইন করুন।যাত্রার স্থান, গন্তব্য, তারিখ ও শ্রেণি নির্বাচন করুন।সিট সিলেক্ট করে পেমেন্ট করুন বিকাশ, নগদ, রকেট বা ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমে।পেমেন্ট সম্পন্ন হলে ইমেইল বা এসএমএসে টিকিট পেয়ে যাবেন।টিকিট প্রিন্ট বা মোবাইলে স্ক্যান কোড দেখিয়ে ট্রেনে উঠতে পারবেন।
মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কেনা (Rail Sheba App):
“Rail Sheba” অ্যাপটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করুন।একাউন্ট তৈরি করে লগইন করুন।যাত্রার তথ্য দিয়ে ট্রেন নির্বাচন করুন।বিকাশ, নগদ বা কার্ডে পেমেন্ট করে টিকিট বুক করুন।অ্যাপেই আপনার টিকিট সংরক্ষিত থাকবে।
কাউন্টার থেকে টিকিট কেনা:
নিকটস্থ রেলস্টেশনে গিয়ে টিকিট কাউন্টার থেকে সংগ্রহ করতে পারেন।ফর্ম পূরণ করে গন্তব্য ও তারিখ উল্লেখ করুন।নগদ পেমেন্টে টিকিট সংগ্রহ করুন।উৎসব বা ছুটির সময় আগেভাগে টিকিট নেওয়া শ্রেয়।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
অনলাইন টিকিট সর্বোচ্চ ৫ দিন আগে কেনা যায়।যাত্রার দিন পরিবর্তন করতে চাইলে আগের টিকিট বাতিল করতে হবে।অনলাইন টিকিট কেনার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার আবশ্যক।আইডি কার্ডে থাকা নামের সঙ্গে টিকিটের নাম একই হতে হবে।টিকিট হারিয়ে গেলে অনলাইনে ডাউনলোড করে পুনরায় সংগ্রহ করা যায়।যাত্রার আগে অন্তত ৩০ মিনিট আগে স্টেশনে উপস্থিত হওয়া উচিত।
এই ধাপগুলো অনুসরণ করলে আপনি ঘরে বসেই সহজে চট্টগ্রাম থেকে জামালপুর ট্রেনের টিকিট বুক করতে পারবেন।
চট্টগ্রাম থেকে জামালপুর ট্রেনে যেতে কত ঘণ্টা লাগে?
সাধারণত চট্টগ্রাম থেকে জামালপুর পৌঁছাতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। ট্রেনের ধরন, স্টপেজ সংখ্যা ও সময়সূচীর ওপর সময় কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।
অনলাইনে চট্টগ্রাম টু জামালপুর ট্রেনের টিকিট কীভাবে কিনব?
আপনি বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট eticket.railway.gov.bd বা “Rail Sheba” মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে অনলাইনে টিকিট কিনতে পারেন। লগইন করে যাত্রার তথ্য দিন, সিট নির্বাচন করুন এবং বিকাশ/নগদে পেমেন্ট করুন। টিকিটটি ইমেইল বা এসএমএসে পেয়ে যাবেন।
উপসংহার
চট্টগ্রাম থেকে জামালপুর ট্রেন ভ্রমণ দীর্ঘ কিন্তু আরামদায়ক ও নিরাপদ। যারা ব্যস্ত নগরজীবনের ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেতে চান, তাদের জন্য ট্রেন ভ্রমণ এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এই রুটে রেলওয়ের সেবা মান উন্নত হয়েছে, ফলে যাত্রীরা এখন সহজে টিকিট পেয়ে নিয়মিত ভ্রমণ করতে পারেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর টিকিট ব্যবস্থা দেশের পরিবহন খাতকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এখন ঘরে বসে মাত্র কয়েক মিনিটে টিকিট কেনা সম্ভব, যা ভ্রমণকে করে তুলেছে ঝামেলামুক্ত।
চট্টগ্রাম থেকে জামালপুর পর্যন্ত ট্রেন ভ্রমণ সময় বাঁচায়, খরচ কমায় এবং নিরাপদ যাত্রার নিশ্চয়তা দেয়। তাই যারা এই রুটে ভ্রমণ করতে চান, তারা উপরের তথ্যগুলো অনুসরণ করলে সহজেই সফল ও আরামদায়ক ভ্রমণ উপভোগ করতে পারবেন।
