সান্তাহার থেকে লালমনিরহাট ট্রেনের সময়সূচী?
সান্তাহার থেকে লালমনিরহাট পর্যন্ত ট্রেন রুটটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ। এই রুটে প্রতিদিন বহু যাত্রী যাতায়াত করেন কর্মস্থল, শিক্ষা, ব্যবসা এবং পারিবারিক প্রয়োজনে। সান্তাহার রেলওয়ে জংশন উত্তরবঙ্গের একটি প্রধান কেন্দ্র যেখানে থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ট্রেন চলাচল করে। অপরদিকে, লালমনিরহাট জেলা বাংলাদেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী অঞ্চল যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নদী ও কৃষিনির্ভর জীবনের জন্য পরিচিত। এই দুই অঞ্চলের মধ্যে ট্রেন যোগাযোগ যাত্রীদের জন্য সাশ্রয়ী, আরামদায়ক ও নির্ভরযোগ্য যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এই রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলো সাধারণত নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যায় এবং যাত্রাপথে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে বিরতি দেয়। ট্রেনে যাত্রা মানে শুধু এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছানো নয়, বরং এটি একধরনের উপভোগ্য অভিজ্ঞতা। যাত্রীরা পথে মাঠ, নদী, গ্রামীণ জীবন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।
বাংলাদেশের রেলওয়ে এই রুটে যাত্রীসেবার মান উন্নত করতে নিয়মিত কাজ করছে। ট্রেনের সময়সূচী, ভাড়া ও টিকেট কেনার পদ্ধতি সম্পর্কে জানা থাকলে যাত্রা আরও সহজ হয়। তাই আজ আমরা জানবো সান্তাহার থেকে লালমনিরহাট ট্রেনের সময়সূচী, ভাড়া, টিকেট কেনার নিয়ম এবং গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ তথ্য।
সান্তাহার থেকে লালমনিরহাট ট্রেনের সময়সূচী?

সান্তাহার থেকে লালমনিরহাট পর্যন্ত ট্রেন রুটে প্রতিদিন বেশ কিছু আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেন চলাচল করে। এসব ট্রেন যাত্রীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় নির্ধারিত সময়ে ছাড়ে। নিচের টেবিলে এই রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলোর নাম, আনুমানিক ভাড়া, প্রথম ও শেষ ট্রিপ এবং ফ্রিকোয়েন্সি উল্লেখ করা হলো। এই তথ্যের মাধ্যমে আপনি আপনার যাত্রা আগেভাগে পরিকল্পনা করতে পারবেন।
| ট্রেনের নাম | ভাড়া (প্রায়) | প্রথম ট্রিপ | শেষ ট্রিপ | ফ্রিকোয়েন্সি |
| লালমনিরহাট এক্সপ্রেস | ৬০০–৮০০ টাকা | ০৬:০০ AM | ০৬:০০ PM | দৈনিক |
| উত্তরা এক্সপ্রেস | ৫৫০–৭৫০ টাকা | ০৫:৩০ AM | ০৫:৩০ PM | দৈনিক |
| নীলসাগর এক্সপ্রেস | ৫৮০–৭৮০ টাকা | ০৭:০০ AM | ০৭:৩০ PM | দৈনিক |
এই ট্রেনগুলো সাধারণত নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যায় এবং পথে বগুড়া, পার্বতীপুর, কাউনিয়া, ও রংপুরসহ বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রী ওঠানামা করে। ট্রেনের সময়সূচী মাঝে মাঝে পরিবর্তিত হতে পারে, তাই যাত্রার আগে বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা স্থানীয় স্টেশন থেকে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া ভালো।
ট্রেন কাউন্টার ও যোগাযোগ তথ্য
ট্রেন ভ্রমণের আগে সান্তাহার ও লালমনিরহাট স্টেশনের কাউন্টার ও যোগাযোগ নম্বর জানা থাকলে যাত্রা অনেক সহজ হয়। যাত্রীরা কাউন্টার থেকে টিকেট কাটা, ট্রেনের সময় নিশ্চিত করা বা প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারেন। নিচের টেবিলে দুই স্টেশনের কাউন্টার নাম এবং ফোন নম্বর দেওয়া হলো।
| স্টেশন | কাউন্টার নাম | মোবাইল নম্বর |
| সান্তাহার | প্রধান টিকেট কাউন্টার | ০১৭xxxxxxxx |
| লালমনিরহাট | রেলওয়ে টিকেট কাউন্টার | ০১৮xxxxxxxx |
সান্তাহার স্টেশনটি উত্তরাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হওয়ায় এখানে যাত্রীসেবা ও তথ্য সহায়তা সর্বদা সক্রিয় থাকে। অন্যদিকে লালমনিরহাট স্টেশনে যাত্রীদের জন্য আলাদা তথ্য ডেস্ক ও সহায়তা টিম রয়েছে। যাত্রার আগে কাউন্টারে যোগাযোগ করলে ট্রেনের সময়সূচী, আসন প্রাপ্যতা এবং যেকোন পরিবর্তন সম্পর্কে আপডেট তথ্য পাওয়া যায়।
ট্রেনের টিকেট কেনার পদ্ধতি?

বাংলাদেশে বর্তমানে ট্রেনের টিকেট কেনা অনেক সহজ ও আধুনিক হয়েছে। যাত্রীরা চাইলে সরাসরি স্টেশন থেকে বা অনলাইনের মাধ্যমে টিকেট সংগ্রহ করতে পারেন। নিচে ধাপে ধাপে পদ্ধতিগুলো উল্লেখ করা হলো—
স্টেশন কাউন্টার থেকে টিকেট কেনা:
যাত্রীরা নিকটস্থ রেলস্টেশন কাউন্টারে গিয়ে সরাসরি টিকেট কিনতে পারেন। এখানে নগদ টাকা বা মোবাইল পেমেন্টের মাধ্যমে ভাড়া পরিশোধ করা যায়।
অনলাইনে টিকেট কেনা (eTicket):
বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট eticket.railway.gov.bd বা মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে ঘরে বসে টিকেট কেনা যায়।
- প্রথমে ওয়েবসাইটে লগইন করতে হবে বা নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।
- তারপর যাত্রার তারিখ, গন্তব্য এবং ট্রেন নির্বাচন করতে হবে।
- আসন ক্লাস (শোভন, স্নিগ্ধা, এসি সিট ইত্যাদি) বেছে নিয়ে পেমেন্ট অপশন সিলেক্ট করতে হবে।
- পেমেন্টের জন্য বিকাশ, নগদ, রকেট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা যায়।
- পেমেন্ট সম্পন্ন হলে টিকেট ই-মেইলে বা এসএমএসে পাওয়া যায়।
মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার:
বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিসিয়াল অ্যাপ “Rail Sheba” ব্যবহার করে খুব সহজেই টিকেট বুকিং, রিফান্ড বা সময়সূচী দেখা যায়।
টিকেট বাতিল ও রিফান্ড:
যদি কোনো কারণে যাত্রা বাতিল করতে হয়, তাহলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনলাইনে বা স্টেশনে গিয়ে টিকেট বাতিল করে আংশিক রিফান্ড পাওয়া যায়।
টিকেট যাচাই:
যাত্রার আগে টিকেটে নাম, তারিখ ও ট্রেন নম্বর সঠিক আছে কিনা তা যাচাই করা জরুরি।
টিকেট সংরক্ষণ ও প্রিন্ট:
অনলাইন বুকিং করা টিকেট প্রিন্ট করে রাখতে হবে বা মোবাইলে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। ট্রেনে ওঠার সময় টিকেট প্রদর্শন করতে হয়।
বিশেষ সুবিধা:
বয়স্ক, শিশু ও প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য বিশেষ ভাড়া ছাড় ও আসন সুবিধা রয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে টিকেটিং ব্যবস্থাকে আরও ডিজিটাল ও নিরাপদ করতে নিয়মিত কাজ করছে। অনলাইন টিকেট সিস্টেমের ফলে এখন যাত্রীরা ঘরে বসেই সহজে তাদের পছন্দের ট্রেনের টিকেট কেটে নিতে পারেন, যা সময় ও ভ্রমণ খরচ দুটোই বাঁচায়।
সান্তাহার থেকে লালমনিরহাট ট্রেনের ভাড়া কত?
ট্রেনের ধরন ও কোচ অনুযায়ী ভাড়া পরিবর্তিত হয়। সাধারণত শোভন কোচের ভাড়া ৫৫০–৭৫০ টাকা এবং এসি কোচের ভাড়া ৬০০–৮০০ টাকার মধ্যে থাকে।
টিকেট অনলাইনে কিভাবে কেনা যায়?
বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা “Rail Sheba” মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে অনলাইনে টিকেট কেনা যায়। যাত্রার তারিখ, গন্তব্য ও আসন নির্বাচন করে বিকাশ, নগদ বা কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট সম্পন্ন করতে হয়।
উপসংহার
সান্তাহার থেকে লালমনিরহাট ট্রেন রুট বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি যোগাযোগ পথ। এই রুটে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ব্যবসা, কর্ম, শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য যাতায়াত করেন। ট্রেন ভ্রমণ শুধু সাশ্রয়ী নয়, বরং আরামদায়ক ও নিরাপদও বটে। সময়সূচী, ভাড়া ও টিকেট কেনার নিয়ম সম্পর্কে আগে থেকেই জানা থাকলে যাত্রা আরও উপভোগ্য হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ে যাত্রীসেবার মান উন্নত করতে নিয়মিত কাজ করছে এবং অনলাইন টিকেটিং সেবা চালুর মাধ্যমে যাত্রীরা এখন আরও সুবিধাজনক ভ্রমণ অভিজ্ঞতা পাচ্ছেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের এই পথে ট্রেনে যাত্রা সত্যিই এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে এই পথে ভ্রমণ করলে তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
