train1

ঢাকা টু চিলাহাটি ট্রেনের সময়সূচী

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ হলো ঢাকা থেকে চিলাহাটি রুট। এই রুটটি রাজধানীকে দেশের উত্তর সীমান্তের সাথে যুক্ত করে, যা নীলফামারী, দিনাজপুর, লালমনিরহাটসহ উত্তরের অনেক জেলার মানুষের প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম। প্রতিদিন হাজারো যাত্রী কর্মজীবন, ব্যবসা, শিক্ষা কিংবা পরিবারের প্রয়োজনে এই রুটে ট্রেনে যাতায়াত করেন। 

ট্রেন ভ্রমণ কেবল আরামদায়কই নয়, বরং এটি নিরাপদ ও সাশ্রয়ীও বটে। ঢাকা থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে ট্রেনে সময় লাগে গড়ে ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা, যা দূরপাল্লার যাত্রীদের জন্য বেশ উপযোগী। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নিয়মিত ট্রেন পরিচালনা করে যাত্রীদের সুবিধার জন্য।

এই রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এবং প্রতিটি শ্রেণির যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে টিকিটের ভিন্ন ভিন্ন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যাত্রীদের সুবিধার জন্য অনলাইন টিকিট ক্রয়, স্টেশন কাউন্টার সেবা এবং মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বুকিং করার সুযোগও রয়েছে। 

সারাদেশ থেকে চিলাহাটি গামী ট্রেনগুলোর মধ্যে ঢাকা-চিলাহাটি রুটটি সবচেয়ে জনপ্রিয়, কারণ এটি রাজধানী থেকে সরাসরি উত্তরাঞ্চলের গভীরে পৌঁছে দেয়। এই পোস্টে থাকবে সময়সূচী, ট্রেন তথ্য, টিকিট কেনার পদ্ধতি ও প্রয়োজনীয় যোগাযোগ নম্বরসহ বিস্তারিত আলোচনা।

ঢাকা টু চিলাহাটি ট্রেনের সময়সূচী

train2

ঢাকা থেকে চিলাহাটি রুটে বাংলাদেশ রেলওয়ের কয়েকটি ট্রেন নিয়মিত যাতায়াত করে। প্রতিটি ট্রেনের আলাদা সময়সূচী, ভাড়া এবং চলাচলের দিন রয়েছে। নিচের টেবিলে ঢাকা টু চিলাহাটি রুটের ট্রেনসমূহ, আনুমানিক ভাড়া, প্রথম ও শেষ ট্রিপের সময় এবং ফ্রিকোয়েন্সি উল্লেখ করা হলো। যাত্রার আগে সর্বশেষ সময়সূচী বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা স্থানীয় স্টেশন থেকে নিশ্চিত করে নেওয়া উচিত।

ট্রেনের নামভাড়া (প্রায়)প্রথম ট্রিপশেষ ট্রিপফ্রিকোয়েন্সি
নীলসাগর এক্সপ্রেস (765/766)550 (স্নিগ্ধা), ৳320 (শোভন চেয়ার)সকাল ৮:০০রাত ৮:০০প্রতিদিন
চিলাহাটি এক্সপ্রেস (809/810)500 (স্নিগ্ধা), ৳280 (শোভন)সকাল ৯:৩০রাত ৯:৩০প্রতি শুক্রবার বাদে প্রতিদিন
বরেন্দ্র এক্সপ্রেস (731/732)530 (স্নিগ্ধা), ৳300 (শোভন)সকাল ৬:২০সন্ধ্যা ৬:৩০প্রতিদিন
একতা এক্সপ্রেস (705/706)560 (স্নিগ্ধা), ৳330 (শোভন চেয়ার)সকাল ১০:০০রাত ১০:০০প্রতিদিন

ঢাকা টু চিলাহাটি ট্রেন কাউন্টার ও যোগাযোগ

ঢাকা থেকে চিলাহাটি গামী ট্রেনের টিকিট পাওয়া যায় বিভিন্ন স্টেশন ও কাউন্টারে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের সুবিধার্থে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কাউন্টার স্থাপন করেছে। এছাড়া মোবাইল বা অনলাইন বুকিংয়ের সুবিধাও এখন সহজলভ্য। নিচে প্রধান প্রধান কাউন্টার ও তাদের যোগাযোগ নম্বর দেওয়া হলো।

কাউন্টার নামঅবস্থানমোবাইল নম্বর
কমলাপুর রেলস্টেশন কাউন্টারকমলাপুর, ঢাকা01711-690730
বিমানবন্দর রেলস্টেশন কাউন্টারউত্তরা, ঢাকা01712-612245
তেজগাঁও রেলস্টেশন কাউন্টারতেজগাঁও, ঢাকা01716-903415
বনানী রেলস্টেশন কাউন্টারবনানী, ঢাকা01712-211490

যাত্রীরা চাইলে এসব কাউন্টার থেকে সরাসরি টিকিট ক্রয় করতে পারেন অথবা বাংলাদেশ রেলওয়ের অনলাইন পোর্টাল eticket.railway.gov.bd থেকে ডিজিটাল টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন। যাত্রার আগে জাতীয় পরিচয়পত্র ও সঠিক তারিখ নিশ্চিত করা জরুরি।

ট্রেনের টিকেট কেনার পদ্ধতি?

train3

বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট কেনার প্রক্রিয়া এখন আগের তুলনায় অনেক সহজ হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির আওতায় অনলাইন বুকিং সিস্টেম চালুর ফলে ঘরে বসেই টিকিট কেনা সম্ভব হচ্ছে। নিচে ধাপে ধাপে টিকিট কেনার পদ্ধতি তুলে ধরা হলো —

প্রথমে বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান — eticket.railway.gov.bd

নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হলে ‘Sign Up’ অপশনে ক্লিক করুন।

জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, মোবাইল নম্বর এবং ইমেইল দিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করুন।

একবার অ্যাকাউন্ট তৈরি হলে ‘Log In’ করে নিজের অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করুন।

এরপর যাত্রার তারিখ, গন্তব্য (Dhaka → Chilahati) এবং শ্রেণি (যেমন শোভন, স্নিগ্ধা, এসি) নির্বাচন করুন।

উপলব্ধ ট্রেনের তালিকা থেকে পছন্দমতো ট্রেন নির্বাচন করুন।

টিকিটের সংখ্যা নির্ধারণ করে “Proceed to Payment” এ ক্লিক করুন।

অনলাইন পেমেন্টের জন্য বিকাশ, নগদ, রকেট বা ব্যাংক কার্ড ব্যবহার করা যায়।

পেমেন্ট সম্পন্ন হলে মোবাইল নম্বরে ও ইমেইলে একটি কনফার্মেশন মেসেজ আসবে।

সেই ইমেইলে থাকা PDF টিকিটটি প্রিন্ট করে বা মোবাইলে সংরক্ষণ করে রাখুন।

স্টেশনে প্রবেশের সময় গেট অফিসারকে টিকিট ও পরিচয়পত্র দেখাতে হবে।

যাত্রার কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে স্টেশনে উপস্থিত হওয়া উত্তম।

যাত্রীরা চাইলে টিকিট পরিবর্তন বা বাতিল করতে পারেন নির্ধারিত নিয়মে।

বাতিলের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট হারে সার্ভিস চার্জ কাটা হয়।

অনলাইন টিকিটের পাশাপাশি সরাসরি কাউন্টার থেকেও টিকিট সংগ্রহ করা যায়।

কাউন্টার টিকিটের জন্য যাত্রীকে নিজের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হয়।

টিকিট বুকিংয়ের সময় যাত্রার তারিখ, গন্তব্য ও ট্রেন নম্বর সঠিকভাবে যাচাই করা জরুরি।

অনলাইন টিকিট প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কেনা যায়।

রেলওয়ে সিস্টেম প্রতিদিন নির্দিষ্ট সংখ্যক টিকিট অনলাইনে প্রদান করে।

টিকিট বিক্রির সময়সীমা সাধারণত যাত্রার তারিখের ৫ দিন আগে শুরু হয়।

যদি ওয়েবসাইটে লগইন সমস্যা হয়, তাহলে “Forgot Password” অপশন থেকে পুনরুদ্ধার করা যায়।

অনলাইন টিকিট বুকিংয়ের সময় ইন্টারনেট সংযোগ স্থিতিশীল থাকা জরুরি।

অনলাইন পেমেন্ট সফল না হলে টিকিট অটোমেটিক্যালি বাতিল হয়ে যায়।

কনফার্ম টিকিট পেলে সেটি পুনরায় বিক্রি করা বা ট্রান্সফার করা যায় না।

যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য সব তথ্য বাংলাদেশ রেলওয়ের সার্ভারে সুরক্ষিত থাকে।

ভ্রমণের সময় টিকিট, পরিচয়পত্র ও কনফার্মেশন মেসেজ সাথে রাখতে হয়।

যাত্রীরা চাইলে মোবাইল অ্যাপ “Bangladesh Railway e-Ticket” থেকেও বুকিং করতে পারেন।

এই অ্যাপে অনলাইন পেমেন্ট, কনফার্মেশন ও টিকিট সংরক্ষণের সুবিধা রয়েছে।

নিয়মিত ট্রাভেলারদের জন্য প্রোফাইল ভিত্তিক বুকিং সহজে করা যায়।

সব মিলিয়ে এখন ট্রেনের টিকিট কেনা অনেক সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ।

ঢাকা থেকে চিলাহাটি ট্রেনে যেতে কত সময় লাগে?

সাধারণত ঢাকা থেকে চিলাহাটি পৌঁছাতে ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা সময় লাগে। তবে ট্রেনের ধরন, স্টপেজ সংখ্যা ও আবহাওয়ার কারণে সময় কিছুটা কম-বেশি হতে পারে।

অনলাইনে টিকিট বুক করলে কিভাবে কনফার্মেশন পাব?

 অনলাইন পেমেন্ট সম্পন্ন হলে ইমেইল ও মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে কনফার্মেশন পাওয়া যায়। এরপর টিকিটের PDF ফাইলটি প্রিন্ট করে বা ফোনে সংরক্ষণ করে ভ্রমণের সময় ব্যবহার করা যায়।

উপসংহার

ঢাকা থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত ট্রেন ভ্রমণ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ যাতায়াত মাধ্যম। এই রুটের ট্রেনগুলো সময়মতো চলাচল করে এবং ভাড়া তুলনামূলক কম হওয়ায় এটি যাত্রীদের কাছে বিশেষ জনপ্রিয়।

অনলাইন টিকিট ব্যবস্থা চালু হওয়ায় যাত্রীরা এখন ঘরে বসেই টিকিট ক্রয় করতে পারছেন। ভ্রমণ পরিকল্পনা করার আগে সময়সূচী ও ট্রেনের অবস্থা যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য আগেভাগে টিকিট বুকিং করে নেওয়াই শ্রেয়।

রেলপথের উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণের ফলে ঢাকার সঙ্গে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো এখন আরও সংযুক্ত হচ্ছে। ভবিষ্যতে দ্রুতগতির ট্রেন ও উন্নত সেবা যুক্ত হলে এই রুটটি আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। তাই যারা নিয়মিত এই পথে যাতায়াত করেন, তাদের জন্য এটি একটি নির্ভরযোগ্য এবং আরামদায়ক বিকল্প।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *