জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী
বাংলাদেশ রেলওয়ের অন্যতম জনপ্রিয় ও ব্যস্ততম ট্রেনগুলোর একটি হলো জামালপুর এক্সপ্রেস। এটি প্রতিদিন ঢাকা ও জামালপুরের মধ্যে চলাচল করে এবং এই রুটের যাত্রীদের জন্য অন্যতম নির্ভরযোগ্য পরিবহন মাধ্যম। ব্যবসা, চাকরি, শিক্ষা, চিকিৎসা কিংবা পারিবারিক কাজে যাতায়াতকারী যাত্রীরা এই ট্রেনটিকেই বেশি বেছে নেন, কারণ এটি সময়মতো ছাড়ে, গন্তব্যে দ্রুত পৌঁছে এবং যাত্রা হয় আরামদায়ক।
জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে রয়েছে সাধারণ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও চেয়ার কোচ—যাত্রীদের পছন্দ অনুযায়ী ভাড়া ও সেবার পার্থক্য রয়েছে। ট্রেনের অভ্যন্তর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, সিটগুলো আরামদায়ক এবং ভ্রমণ নিরাপদ।ঢাকা থেকে জামালপুর পর্যন্ত ট্রেনপথের সৌন্দর্যও মনোমুগ্ধকর। পথে দেখা মেলে নদী, গ্রাম, ক্ষেত-খামার ও প্রকৃতির সজীব সবুজ ছোঁয়া।
বাংলাদেশ রেলওয়ে নিয়মিতভাবে ট্রেনের সময়সূচী ও সেবার মান উন্নত করছে, যাতে যাত্রীদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা আরও সুখকর হয়। এই আর্টিকেলে বিস্তারিত জানানো হলো—জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী, ভাড়া, যোগাযোগ নম্বর, টিকিট কেনার নিয়ম এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ, যা আপনাকে যাত্রার আগে জানলে উপকার হবে।
জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী

জামালপুর এক্সপ্রেস প্রতিদিন ঢাকা ও জামালপুরের মধ্যে চলাচল করে। এই ট্রেনটি ইন্টারসিটি ক্যাটাগরির হওয়ায় এটি দ্রুতগামী ও সময়নিষ্ঠ। যাত্রীরা সকাল ও সন্ধ্যা—দু’টি সময়েই এই ট্রেন ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারেন। সাধারণত ট্রেনটি প্রতিদিন একবার করে যাত্রা করে, তবে বিশেষ দিনে অতিরিক্ত সার্ভিস যুক্ত হতে পারে।
নিচে জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী, ভাড়া এবং ফ্রিকোয়েন্সির একটি টেবিল দেওয়া হলো—
| ট্রেনের নাম | ভাড়া (প্রায়) | প্রথম ট্রিপ | শেষ ট্রিপ | ফ্রিকোয়েন্সি |
| জামালপুর এক্সপ্রেস | ৳৩৮০–৳৬০০ | ঢাকা থেকে সকাল ৮:১০ | জামালপুর থেকে বিকেল ৩:৩০ | প্রতিদিন |
জামালপুর এক্সপ্রেস সাধারণত ঢাকা কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, দেওয়ানগঞ্জসহ বিভিন্ন স্টেশনে বিরতি দিয়ে জামালপুরে পৌঁছে। পুরো যাত্রায় সময় লাগে প্রায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা।
ট্রেন কাউন্টার ও যোগাযোগ নম্বর সমূহ
যাত্রার আগে টিকিট সংগ্রহ বা সময়সূচী জানতে রেল কাউন্টারগুলোর যোগাযোগ নম্বর জানা জরুরি। জামালপুর এক্সপ্রেসের টিকিট পাওয়া যায় ঢাকা, ময়মনসিংহ ও জামালপুর স্টেশনের নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে। এছাড়াও অনলাইন টিকিটিং সার্ভিসও রয়েছে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাউন্টার ও যোগাযোগ নম্বর তুলে ধরা হলো—
| কাউন্টার নাম | অবস্থান | যোগাযোগ নম্বর |
| কমলাপুর রেলস্টেশন কাউন্টার | ঢাকা | ০২-৯৩৩০৫২২ |
| জামালপুর রেলস্টেশন কাউন্টার | জামালপুর সদর | ০৯৮১-৫১২২২ |
| ময়মনসিংহ রেলস্টেশন কাউন্টার | ময়মনসিংহ | ০৯১১-৬৩১৩১ |
| বাংলাদেশ রেলওয়ে তথ্য সেবা | ঢাকা | ১৩১ (হেল্পলাইন) |
| অনলাইন টিকিটিং সহায়তা | রেলওয়ে ই-সার্ভিস সাপোর্ট | ০১৭১-২৩৪৫৬৭৮ |
এই কাউন্টারগুলো সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। যাত্রার সময়ের অন্তত এক ঘণ্টা আগে স্টেশনে উপস্থিত হওয়া ভালো, বিশেষ করে ছুটির দিন বা উৎসব মৌসুমে।
ট্রেনের টিকেট কেনার পদ্ধতি?

বাংলাদেশ রেলওয়ে এখন ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে। তাই ট্রেনের টিকিট কেনা এখন খুব সহজ ও দ্রুত। আপনি চাইলে ঘরে বসে অনলাইনে বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট বুক করতে পারেন। নিচে বিস্তারিতভাবে তিনটি উপায়ে টিকিট কেনার প্রক্রিয়া দেওয়া হলো—
অনলাইনে টিকিট কেনা (eticket.railway.gov.bd):
প্রথমে বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান।নতুন একাউন্ট খুলুন বা পুরনো একাউন্টে লগইন করুন।যাত্রার স্থান, গন্তব্য, তারিখ ও শ্রেণি নির্বাচন করুন।ট্রেনের তালিকা থেকে “জামালপুর এক্সপ্রেস” নির্বাচন করুন।সিট বেছে নিয়ে পেমেন্ট করুন বিকাশ, নগদ, রকেট বা ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমে।পেমেন্ট সফল হলে ইমেইল বা এসএমএসে টিকিট পেয়ে যাবেন।টিকিট প্রিন্ট করে বা মোবাইলে দেখিয়ে ট্রেনে উঠতে পারবেন।
মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কেনা (Rail Sheba App):
- প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোর থেকে “Rail Sheba” অ্যাপ ডাউনলোড করুন।
- অ্যাপে লগইন করে যাত্রার তথ্য দিন।
- “জামালপুর এক্সপ্রেস” নির্বাচন করুন এবং পেমেন্ট সম্পন্ন করুন।
- টিকিট অ্যাপে সংরক্ষিত থাকবে, যা ভ্রমণের সময় প্রদর্শন করতে পারবেন।
কাউন্টার থেকে টিকিট কেনা:
- নিকটস্থ রেলস্টেশন কাউন্টারে যান।
- যাত্রার তারিখ, সময় ও গন্তব্য উল্লেখ করে টিকিট কিনুন।
- নগদ পেমেন্টের পাশাপাশি কিছু কাউন্টারে বিকাশ বা কার্ড পেমেন্টও নেওয়া হয়।
- উৎসব মৌসুমে আগেভাগে টিকিট নেওয়া সবচেয়ে ভালো।
গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা:
- অনলাইন টিকিট সর্বোচ্চ ৫ দিন আগে কেনা যায়।
- টিকিটে দেওয়া নাম ও যাত্রীর নাম এক হতে হবে।
- যাত্রার অন্তত ৩০ মিনিট আগে স্টেশনে উপস্থিত হওয়া জরুরি।
- বাতিল টিকিটের টাকা ফেরত পাওয়া যায় নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী।
- অনলাইন টিকিট হারালে ইমেইল বা অ্যাপ থেকে পুনরায় ডাউনলোড করা যায়।
এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে যেকোনো যাত্রী সহজে জামালপুর এক্সপ্রেসের টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন, সময় বাঁচবে এবং ভ্রমণ হবে ঝামেলামুক্ত।
জামালপুর এক্সপ্রেসে ঢাকা থেকে জামালপুর যেতে কত সময় লাগে?
সাধারণত ঢাকা থেকে জামালপুর পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। ট্রেনের সময়সূচী, আবহাওয়া এবং রেলপথের অবস্থা অনুযায়ী সময় কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।
জামালপুর এক্সপ্রেসের টিকিট অনলাইনে কীভাবে কিনব?
আপনি বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট eticket.railway.gov.bd বা “Rail Sheba” মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে অনলাইনে টিকিট কিনতে পারেন। লগইন করে যাত্রার তথ্য দিন, “জামালপুর এক্সপ্রেস” নির্বাচন করুন এবং বিকাশ বা নগদে পেমেন্ট করুন। এরপর এসএমএস বা ইমেইলে টিকিট পেয়ে যাবেন।
উপসংহার
জামালপুর এক্সপ্রেস বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি নির্ভরযোগ্য ও জনপ্রিয় ট্রেন, যা প্রতিদিন হাজারো যাত্রীকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। সময়নিষ্ঠতা, আরামদায়ক সেবা এবং সাশ্রয়ী ভাড়ার কারণে এই ট্রেনটি বিশেষভাবে যাত্রীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে।
ঢাকা থেকে জামালপুর পর্যন্ত যাত্রায় আপনি পাবেন প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য, গ্রামীণ জীবনের স্বাদ এবং নির্ভরযোগ্য ভ্রমণের নিশ্চয়তা।
বাংলাদেশ রেলওয়ে ক্রমেই আধুনিক হয়ে উঠছে, ফলে যাত্রীরা এখন ঘরে বসেই টিকিট কিনতে পারছেন এবং সেবার মানও বেড়েছে।
জামালপুর এক্সপ্রেসে ভ্রমণ মানে শুধু একটি যাত্রা নয়—এটি একটি আরামদায়ক অভিজ্ঞতা, যেখানে সময়, নিরাপত্তা এবং স্বাচ্ছন্দ্যের সমন্বয় ঘটে।
যারা নিয়মিত যাতায়াত করেন বা নতুনভাবে এই রুটে ভ্রমণ করতে চান, তারা এই তথ্যগুলো জানলে সহজেই ঝামেলামুক্ত ভ্রমণ উপভোগ করতে পারবেন।
